হৃদয়ের অতল গহব্বরে লুকিয়ে থাকা না বলা কিছু কথা আজ মনের মাধুরী মিশিয়ে দ্বীপ জনপদের নেটিজেনদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করলেন বিএনপি নেত্রী ফৌজিয়া সাফদার সোহেলী। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি বলেন, “দ্বীপের মানুষকে ভালোবেসে, দ্বীপের সত্য উচ্চারণ করতে এসেছি; অপ্রিয় হলেও এটি সময়ের দাবি।”
২১ বর্গমাইলের এই হাতিয়া মানবিকতা, সামাজিক সংগঠন, রাজনীতি, রাজত্ব, দখলদারিত্ব, চোরাকারবারি, মাদকের অভয়ারণ্য ও সামাজিক অবক্ষয়ে জর্জরিত এক দ্বীপ। ফৌজিয়া সাফদার সোহেলী তার লেখায় তুলে ধরেছেন, বিদ্যালয় যখন রাজনৈতিক আঁতুড়ঘর, শিক্ষক রাজনীতিতে হাতিয়া সয়লাব, নদীঘাট থেকে টলার ফিটনেসহীন চলাচল, তেল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, দলীয় রাজনীতির অপব্যবহার, ভাই রাজনীতির বিস্তার, ট্যাগিং এবং ফেসবুকে চরিত্রহনন—এগুলো যেন দ্বীপ জনপদের দৈনন্দিন বাস্তবতা।
নিজের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণ করে ফৌজিয়া বলেন, “জমিদার বাবার ঘরে সোনার চামচ মুখে জন্মেছি আমি। কিন্তু সেই পরিচয় অহংকার নয়, বরং জন্মসূত্রে পাওয়া আত্মমর্যাদা জাগ্রত করার প্রয়াস।” তিনি উল্লেখ করেন, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর উত্তরে মেঘনার স্রোতের মাঝে বেড়ে ওঠা জীবনের গল্পই তাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে শিখিয়েছে।
শৈশবের স্মৃতি টেনে তিনি বলেন, “বাবা-চাচার শাসন বারণের মাঝেও কাঁদামাটি মেখে খেলেছি, গোল্লাছুট খেলেছি, রাখালিয়ার বাঁশির সুরে হারিয়ে গিয়েছি। তবু প্রতিদিন জমিদার বাড়ির কড়া শাসন এড়িয়ে সেই কাঠের দোতালায় ফিরে আসতে হয়েছে।”
ফৌজিয়া জানান, তার পূর্বপুরুষরা দ্বীপে শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন জ্ঞানের প্রদীপ। “আগামী প্রজন্ম যেন শিক্ষায় আলোকিত হয়—এই আদর্শেই দাদা ও চাচারা দ্বীপে শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছিলেন। তাদের পথেই হাঁটছি আমি।”
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়া ফৌজিয়া জানান, তার রাজনৈতিক চেতনা গড়ে উঠেছে পিতা আলাউদ্দিন খিলজি ও বড় আব্বা নবীর উদ্দিন সফদারের আদর্শে। তিনি বলেন, “রাজনীতি বিমুখ হয়ে জনকল্যাণ সম্ভব নয়। তাই মানবতার রাজনীতি নিয়েই পথ চলেছি।”
স্বামী আফছার উদ্দিন সফদারকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, “প্রিয় আফছার মিয়া, আপনি আমার জীবনের অবিকল্প সারথি। সুখে-দুঃখে আপনি ছিলেন পাশে, আছেন পাশে।”
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ফৌজিয়া লিখেছেন, “জন্মেছি দ্বীপে, নিশ্বাস হোক শেষ ধানসিঁড়ির তীরে। জীবনের শেষ বিকেলে হয়তো আশ্রয় নেবো কোনো বৃদ্ধার কুঁড়েঘরে, পলিথিনে মোড়ানো স্যাঁতস্যাঁতে কাঁথার নিচে। কারণ সেই মাটির বিছানার মূল্য কোটি টাকার আবেগে মিশ্রিত।”
চলবে...
Hatiyar Kotha