ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বৃহত্তর নোয়াখালী এগোলে, এগোবে বাংলাদেশ

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 5, 2025 ইং
বৃহত্তর নোয়াখালী এগোলে, এগোবে বাংলাদেশ ছবির ক্যাপশন: বৃহত্তর নোয়াখালীর মানচিত্র
ad728
যারা বৃহত্তর নোয়াখালীকে ছোট করে দেখে তারা আসলে নোয়াখালীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অজ্ঞ। এই জনপদ শিক্ষা, সংস্কৃতি, ব্যবসা ও বাণিজ্যে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল, যার গৌরব আজও অটুট। বৃহত্তর নোয়াখালী এগোলে, এগিয়ে যাবে গোটা বাংলাদেশ। কারণ এ অঞ্চলের মানুষের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা-বাণিজ্য দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। শুধু তাই নয়, নোয়াখালীর প্রবাসীরা পৃথিবীর প্রায় সব দেশে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। আর তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। নোয়াখালীর মানুষের এই বিশ্বব্যাপী অবস্থান ও অবদানকে উপলব্ধি করেই প্রবীণরা গর্বভরে বলেন, "চান্দের দেশে গেলেও নোয়াখালীর মানুষ খুঁজে পাবেন"। "দশ হাত মাটির নিচে গেলেও নোয়াখালীর মানুষ খুঁজে পাবেন"।

দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষ রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা। ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ২৪ জুলাইয়ের বিপ্লব সব আন্দোলনেই এ অঞ্চলের মানুষ ছিলেন সক্রিয় অংশীদার। ইতিহাসে বলা হয়ে থাকে নোয়াখালী দাঙ্গা না হলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। এই অঞ্চল রাজনৈতিক পরিবর্তন ও জাতীয় আন্দোলনের এক অনন্য চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নোয়াখালীর বীর সন্তানরা তাঁদের প্রাণ উৎসর্গ করে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে করেছে গৌরবান্বিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, শহীদ বীর শ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন; শহীদ বুদ্ধিজীবী এ.এন.এম. মুনীর চৌধুরী; হবিবুর রহমান (মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী); ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম; শহীদ বুদ্ধিজীবী সেলিনা পারভীন; শহীদুল্লাহ কায়সার; শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক; জহির রায়হান; আ স ম আবদুর রব প্রমুখ। এছাড়াও ছাব্বিশের জুলাই বিপ্লবে নোয়াখালীর কৃতি সন্তানরা নেতৃত্ব দিয়ে প্রমাণ করেছেন এ অঞ্চলের মানুষ কেবল অংশগ্রহণকারীই নয়, জাতীয় আন্দোলনের দিশারি।

বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের বিকাশে নোয়াখালীর অবদান অনস্বীকার্য। এ অঞ্চলের মানুষই গড়ে তুলেছিলেন দেশের বড় বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, যা আজও সাহিত্য ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই ধারার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। যিনি বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের একজন অগ্রদূত এবং বাংলা একাডেমি বইমেলার স্বপ্নদ্রষ্টা উদ্যোক্তা। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে সূচিত হয়েছিল নতুন দিগন্ত। তাছাড়াও নোয়াখালীর চৌমুহনী একসময় ছিল একটি সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রণ ও প্রকাশনা কেন্দ্র, যা দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চাকে সমৃদ্ধ করতে রেখেছিল অমূল্য অবদান।

বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের অঙ্গনে নোয়াখালীর কৃতি সন্তানদের অবদান অত্যন্ত গৌরবময়। এ অঞ্চলের বহু প্রতিভাবান ব্যক্তি তাঁদের সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও শিল্পকর্মের মাধ্যমে জাতীয় অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, আতাউর রহমান (মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা, মঞ্চ নির্দেশক এবং লেখক); আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল (গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, গায়ক এবং মুক্তিযোদ্ধা); কবির চৌধুরী (প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক); আবদুশ শাকুর (প্রাক্তন সচিব, সাহিত্যিক ও সুরকার); মোতাহের হোসেন চৌধুরী (শিক্ষাবিদ ও লেখক); ফেরদৌসী মজুমদার (খ্যাতিমান অভিনেত্রী); প্রণব ভট্ট (ঔপন্যাসিক); মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (মননশীল প্রবন্ধকার, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী); মালেক আফসারী (চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার); এ.টি.এম. শামসুজ্জামান (খ্যাতিমান অভিনেতা, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব); সেলিনা হোসেন (কথাসাহিত্যিক); ড. সেলিম আল দীন (নাট্যকার ও শিক্ষক) প্রমূখ। এই কৃতি ব্যক্তিত্বরা তাঁদের জ্ঞান, সাহিত্যকর্ম, শিল্পচর্চা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে শুধু নোয়াখালী নয়, সমগ্র বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁদের অবদান আজও প্রেরণার উৎস।

এই অঞ্চলের মানুষ দেশের শিল্প-বাণিজ্য অঙ্গনে রেখেছে এক অগ্রণী ভূমিকা। এ অঞ্চলের অনেক কৃতি উদ্যোক্তা আজ দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। তাঁদের প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আবুল খায়ের গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, আজিম গ্রুপ প্রমুখ। শুধু বৃহৎ শিল্পই নয়, ব্যাংক ব্যবসা, চামড়া শিল্প, গার্মেন্টস শিল্পসহ অসংখ্য ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায়ও নোয়াখালীর মানুষের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁরা নিজেদের সৃজনশীলতা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ফলে দেশের আঞ্চলিক জিডিপিতে নোয়াখালীর মানুষের অবদান আজ এক শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে, যা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

নোয়াখালী অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থান দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ব্যতিক্রমী। এখানে বেকারত্বের হার সবচেয়ে কম, যা এ অঞ্চলের মানুষের কর্মঠ মনোভাব ও উদ্যোগী মানসিকতারই প্রমাণ। এই কারণেই নোয়াখালীকে দেশের "এক নাম্বার ধনী জেলা" হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম পর্যন্ত সব জায়গায় বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষ তাঁদের দৃঢ় অবস্থান ও কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে।

শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, দেশের প্রশাসন, আমলাতন্ত্র ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও এ অঞ্চলের বহু কৃতি সন্তান নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের দক্ষতা, সততা ও অবদানের মাধ্যমে তাঁরা জাতীয় অগ্রযাত্রায় এক উজ্জ্বল অধ্যায় সৃষ্টি করে চলেছেন। তাই বৃহত্তর নোয়াখালী শুধু একটি অঞ্চল নয়; এটি বাংলাদেশের অগ্রগতি, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রাণকেন্দ্র। যখন নোয়াখালী এগোবে, তখন সমগ্র বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

রাকিবুল হাসান মুন্না 
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ 
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

নিউজটি পোস্ট করেছেন : Hatiyar Kotha

কমেন্ট বক্স
ডাকসুর আমন্ত্রণে ঢাবিতে রুহুল কবির রিজভী

ডাকসুর আমন্ত্রণে ঢাবিতে রুহুল কবির রিজভী